* ইসরায়েলকে সহযোগিতা করলে লক্ষ্যবস্তু হবে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-ফ্রান্সের ঘাঁটি : ইরান
* পাল্টাপাল্টি হামলায় জেরুজালেম, তেল আবিব ও তেহরানে বিকট বিস্ফোরণ
* তেহরানের আবাসিক ব্লকে ইসরায়েলি হামলায় ১২ পরমাণু বিজ্ঞানীসহ ৭৮ জন নিহত
* ইসরায়েলে ইরানের হামলায় নিহত ৩, আহত ৬৩ জন
* ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুমকি: ‘তেহরান পুড়ে যাবে’
* ইরানের জনগণকে বিদ্রোহ করতে ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহুর ডাক
* ইরানে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইসরায়েলের
* ইরানের পাল্টা জবাবের মধ্যেই গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা
* ইরান ও ইসরায়েলকে শান্ত থাকার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা। ইসরায়েল ও ইরান একে অপরকে লক্ষ্য করে গত শনিবার রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের প্রাণহানির সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ৩ জন নিহত এবং ৬৩ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ১২ পরমাণু বিজ্ঞানীসহ ৭৮ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন আরও ৩০০ জনের বেশি। তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চালানো পাল্টা হামলায় পশ্চিমা শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করলে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক ঘাঁটি ও যুদ্ধজাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। অপরদিকে ইরান যদি ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে তেহরানকে ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে চলমান এই সংঘাতের প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ আর তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যথেষ্ট হয়েছে। এবার থামার সময়। শান্তি ও কূটনীতির জয় হোক এমন আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
জানা গেছে, ইসরায়েল ও ইরান একে অপরকে লক্ষ্য করে শনিবার রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর ফলে জেরুজালেম, তেল আবিব এবং তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এরপর থেকেই জেরুজালেমের পুরোনো শহর সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রাণকেন্দ্র ও দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ওপর হামলা চালায় ইসরায়েল। এ ঘটনার পরই ইরান পাল্টা জবাব দেয়। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রথমে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। এরপর ইসরায়েলের দিকে একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এই হামলা চলাকালে জেরুজালেম ও তেল আবিবের আকাশ অন্ধকারের মধ্যেও বিস্ফোরণের আলোয় ঝলমল করে ওঠে এবং নিচের ভবনগুলো কেঁপে ওঠে। এসময় জনগণকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার জন্য একাধিক সতর্কতা জারি করা হয়। বিবিসির আইওন ওয়েলস জানিয়েছেন, জেরুজালেমে একটি বিস্ফোরণের শব্দ তিনি নিজ কানে শুনেছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত ও কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের দক্ষিণে রিশোন লেজিয়োন এলাকায় বাড়িঘরের কাছে ইরানের রকেট হামলায় অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬৩ জনের বেশি। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক প্যারামেডিক সদস্যকে পাঠানো হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ও কয়েকজন ব্যক্তি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছেন।
আয়ালন অঞ্চলের জরুরি সেবা বিভাগের উপপরিচালক রামি মুশার বলেন, এটি একটি কঠিন ও জটিল পরিস্থিতি। ভবনগুলোর ভেতর আর কোনো হতাহত আছে কি না তা নিশ্চিত হতে আমরা এখনো কাজ করে যাচ্ছি। নিউইয়র্ক টাইমসও ইসরায়েলি পুলিশের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে তেল আবিবের কাছে একটি শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ঘটনাস্থলেই ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ কথা জানিয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের দূত জানিয়েছেন, গত শুক্রবার ইসরায়েলি হামলায় ৭৮ জন নিহত এবং অন্তত ৩২০ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। তবে তেহরানের দাবি, ইরানে ইসরায়েলি হামলায় দেশটির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও ১২ জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন।
মেহের নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার রাতভর ইহুদিবাদি সরকার তেহরান এবং এর কাছাকাছি, পাশাপাশি ইরানের অন্যান্য শহরগুলোতে ধারাবাহিক সামরিক হামলা শুরু করে। হামলার সময় আবাসিক ভবনগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের ওপরও হামলা চালায়। এই হামলায় নিহত জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও রয়েছেন-ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি এবং ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি।
চলমান হামলার পর জেরুজালেমের পুরোনো শহরের অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ দামেস্ক গেটের সিঁড়ির মুখে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। এমনকি সাধারণত শত শত মুসলিম আল আকসা মসজিদে নামাজের জন্য যান। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় তারাও মসজিদে উপস্থিত হতে পারেননি।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনী জানিয়েছে, দেশটির বিমানবাহিনী আবারও ইরানে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত। আইডিএফ প্রধান অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জামির বলেন, ‘ইরানে পৌঁছানোর পথ তৈরি হয়ে গেছে।’ ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত রাখার হুমকি দিয়েছে ইরান। সেই সঙ্গে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার হুমকিও দিয়েছে তেহরান।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ও দেশটির প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে হামলার পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল। ইরানের তরফে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে তাদের (ইসরায়েল) জীবন তিক্ত হয়ে উঠবে। যদি তারা মনে করে এই আঘাতেই সব শেষ তাহলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছি, তারা যে যুদ্ধ শুরু করেছে তা শেষ করবে ইরান। তাদের অক্ষত রাখা হবে না।’
ইসরায়েল দাবি করেছে, ইয়েমেন থেকে ছোড়া ৩টি ড্রোন তারা ভূপাতিত করেছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতার সাইরেন বাজতে শোনা গেছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর মধ্যেই ইরান হুঁশিয়ার করে বলেছে, কেউ ইসরায়েলের পক্ষে এই হামলায় বাধা দিলে, সেই দেশের ঘাঁটিকেই তারা হামলার লক্ষ্য বানাবে।
এদিকে নিরাপত্তা ইস্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজেদের দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। একইসঙ্গে ইসরায়েলি ও ইহুদি নাগরিকদের প্রকাশ্যে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট প্রতীক না প্রদর্শনের পরামর্শ দিয়েছে তেল আবিব। তীব্র এই সামরিক উত্তেজনায় গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বাড়ছে যুদ্ধের শঙ্কা।
এদিকে তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইরান বিশেষ করে নেভাতিম ও ওভদা ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে। কারণ এই ঘাঁটি দুটোই ছিল ইরানে হামলা চালাতে ব্যবহৃত প্রধান কেন্দ্র এবং কমান্ড ও ওয়ারফেয়ার ঘাঁটি। এ ছাড়া রাজধানী তেল আবিবের কাছে টেল নোফ ঘাঁটি, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও শিল্প স্থাপনাতেও হামলা চালানো হয়। সংবাদ সংস্থাটির খবরে আরও বলা হয়, অপারেশনটি কয়েকটি পর্বে শেষ হয় এবং মোট কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। যা অনেক স্থানে প্রবল বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। হামলার কথা স্বীকার করে ইরানি কমান্ডাররা জানিয়েছেন, এটি ছিল ইরানি ভূখণ্ড এবং পারমাণবিক বিশেষজ্ঞ ও সেনা কমান্ডারদের ওপর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক হামলার জবাব। তারা আরও জানান, দেড় শতাধিক স্থানে আঘাত হেনে ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, যে কোনো হামলা বা অপরাধ বিনাদণ্ডে পার পাবে না। বিষয়টি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইসরায়েল যে অপরাধ করেছে, তার জন্য ভয়াবহ ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি অপেক্ষা করছে।
অপরদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চালানো পাল্টা হামলায় পশ্চিমা শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করলে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক ঘাঁটি ও যুদ্ধজাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। গত শুক্রবার বিকেলে ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স যদি ইসরায়েলকে প্রতিরক্ষা সহায়তা দেয়, তবে তাদের আঞ্চলিক ঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনায় ইরান হামলা চালাতে বাধ্য হবে।
এই হুমকির মাধ্যমে তেহরান স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে বাইরের কোনো রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করলে তা সরাসরি যুদ্ধের পথে ঠেলে দেবে। ইরানি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই তিন পশ্চিমা শক্তির আঞ্চলিক নৌ-ঘাঁটি, বিমানঘাঁটি এবং যুদ্ধজাহাজ এখন ইরানের নজরদারিতে রয়েছে।
এদিকে ইসরায়েল আগেই জানিয়ে এসেছে, ইরানের হামলা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে তারা। তবে ইরানের এমন হুমকির পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের নাম করে হুমকি দেওয়া ইরানের কূটনৈতিক কৌশলে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে এর ফলে উত্তেজনা চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছাতে পারে।
ইরানের জনগণকে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ডাক দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এক ভিডিও বার্তায় এ ডাক দেন তিনি। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভিডিও বার্তা ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় ইরানে ক্ষমতাসীন কট্টর ইসলামপন্থি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশটির সাধারণ জনগণকে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
নেতানিয়াহু তার ভিডিওবার্তায় বলেন, গত কয়েক দশক ধরে আপনাদের ওপর যে অশুভ ও দমনমূলক শাসকগোষ্ঠী জেঁকে বসেছে, তাদের পতনের সময় এখনই। নিজস্ব পতাকা ও গৌরবময় ঐতিহ্যের ছায়াতলে ফিরে আসুন। নিপীড়নের শৃঙ্খল ছিন্ন করে মুক্তির জন্য এক হয়ে আওয়াজ তুলুন। আপনারা এখন এক ঐতিহাসিক সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, এই সুযোগ গ্রহণ করুন। তিনি আরও বলেন, ইরানে আমরা যে সামরিক অভিযান শুরু করেছি, তা সে দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র ইরানের পারমাণবিক হুমকি ও ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ প্রতিরোধে।
এছাড়াও ইরানে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইরান-ইসরায়েল ইস্যু নিয়ে শনিবার বিবিসির লাইভ আপডেটে এ তথ্য জানানো হয়। টেলিগ্রামে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে আইডিএফ জানায়, ইরানে ইসরায়েলের জন্য হুমকিস্বরূপ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য, ইসরায়েলের জন্য সবরকম হুমকি নির্মূল করা। ইরান যদি ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে তেহরানকে ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। তিনি আরও বলেন, ইরানি স্বৈরশাসক তার জনগণকে জিম্মি বানাচ্ছেন। এমন একটি বাস্তবতা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বিশেষ করে তেহরানবাসীকে ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর চালানো অপরাধমূলক হামলার জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য এমন সময় এলো, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বার্তা শুধু হুমকিই নয়, বরং ভবিষ্যৎ অভিযানের আগাম ইঙ্গিতও বহন করে।
এদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যেই অবরুদ্ধ গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। এক সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে গতকাল শনিবার সকালে স্থানীয় সময় প্রায় সোয়া ১০টার দিকে গাজার আশপাশে সতর্কতা জারি করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ওই সময় দুটি রকেট একটি খোলা এলাকায় থাকতে দেখা গেছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে রাতভর তীব্র হামলার পর এই রকেট হামলা চালানো হয়।
তবে গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা। এই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদফতরের কমান্ডার ও বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ ও ১২ জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলের হামলার পর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে শুক্রবার রাতে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ নামে’ অভিযান শুরু করে ইরান। মিসাইল হামলা শুরু হতেই নিজের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ও উচ্চপদস্থ মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে মাটির নিচে বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
চলমান এই সংঘাতের প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। নিজের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বার্তায় গুতেরেস লিখেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ, আর তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা- যথেষ্ট হয়েছে। এবার থামার সময়। শান্তি ও কূটনীতির জয় হোক।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

ইরানের কাছে ধরাশায়ী ইসরায়েল
- আপলোড সময় : ১৫-০৬-২০২৫ ১২:৪৯:৪২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-০৬-২০২৫ ১২:৪৯:৪২ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ